বিরিয়ানি রেসিপি : বিশ্বজিৎ দাস
বিরিয়ানির উৎস:- বিরিয়ানি শব্দটি উর্দু এবং ফার্সি। ফারসি ভাষায় বিরিঞ্জ অর্থ চাল। ‘বিরিয়ান’র অর্থ ভেজে নেওয়া। অর্থাৎ মূলত ভাজা মাংস ও ভাতের সহযোগে তৈরি পদ। এটি বিরানি, বেরিয়ানি, বিরিয়ান্নি ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বিরিয়ানি রান্নার আগে চাল ঘি দিয়ে ভেজে নেওয়ার প্রথা ছিল। সেই বিরিয়ানির বিবর্তন ঘটেছে। মুঘল-পাঠানের প্রিয় পদ এখন আদ্যান্ত ভারতীয়। তবে বদল ঘটেছে বিস্তর। নানান রকম পরীক্ষানিরিক্ষা এখনও জারি। ভেড়ার মাংসের বদলে মাটন, চিকেন, চিংড়ি এমন কী সবজি , পনির পর্যন্ত হয়ে উঠেছে বিরিয়ানির উপকরণ।
প্রকারভেদ:-
অওয়াধি বিরিয়ানি, হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি , কলকাতা বিরিয়ানি, মালাবার বিরিয়ানি, মোরাদাবাদী বিরিয়ানি, সিন্ধ্রি বিরিয়ানি, লখনউ বিরিয়ানি, থালাসারি বিরিয়ানি ও কোঝিকোড় বিরিয়ানি , মেমোনি বিরিয়ানি, কামপুরি বিরিয়ানি। হাজার এক নাম, হাজার এক স্বাদ হল বিরিয়ানি ।
১। চিকেন বিরিয়ানি
কী কী লাগবে:- বাসমতী চাল ৭০০ গ্রাম (বাড়ির ভাতের চালেও হবে ), মুরগির মাংস দেড় কেজি, পেঁয়াজ কুচি ৪ টি বড় মতো, রসুন 8 কোয়া, কাঁচালঙ্কা, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই ৪ টেবিল চামচ, টক দই ৪ টেবিল চামচ, গোটা মশলা যেমন- লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, জায়ফল, জয়িত্রী , ধনে, আন্দাজ মতো, দুধে ভেজানো জাফরান অথবা কামধেনু রঙ অল্প। কেওড়া জল আন্দাজ মতো। দেশি ঘি ২ টেবিল চামচ ৷
পেঁয়াজ কুচি করে দুধে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন।তেল খুব গরম হলে পেঁয়াজ কুচিগুলি তুলে নিয়ে ভাজুন।এতে পেঁয়াজে তাড়াতাড়ি বাদামি রঙ ধরবে এবং পেঁয়াজ কুচিগুলিও মুচমুচে হবে ৷
আরও পড়ুন – নয়া ফিচার হোয়াটসঅ্যাপে, মাল্টি ডিভাইস সাপোর্ট ও ম্যাসেজ রিঅ্যাকশন সহ একাধিক, জেনে নিন বিস্তারিত
তৈরি:- প্রথমে গোটা মশলা গুলো মিক্সিতে পিষে নিন। এবার কাঁচালঙ্কা,পেঁয়াজ , রসুন ও আদা মিক্সিতে পেষ্ট করে রাখুন। টকদই –এ গুড়ো মশলাগুলো দিয়ে ফেটিয়ে রাখুন। এবার মাংসের মধ্যে সব বাটা মশলা এবং -গুঁড়ো মশলা মেশানো টক দই ও নুন-চিনি দিয়ে মেরিনেট করুন। জল দিতে হবে না।বেশি সময় ধরে মেরিনেট করলে মাংস নরম হয়। ফ্রিজেও রাখতে পারেন বেশ কিছু সময়। এবার মেরিনেট করা মাংস ও গোটা আলু প্রেসার কুকারে দিয়ে ২/ ৩ টি সিটি দিন।খেয়াল রাখবেন রান্নার সময় আঁচ হালকা করে নিতে হবে।
বিরিয়ানি ভাতের জন্য যা যা করবেন:- চাল অন্তত এক ঘণ্টা মতো জলে ভিজিয়ে রাখুন। এবার একটিপাত্রে জল দিয়ে ফুটতে দিন। তাতে জল ঝরিয়ে চালগুলো দিয়ে দিন।ঐ সঙ্গে তেজপাতা ও নুন দিন।জলের পরিমাণ চাল অনুযায়ী দিতে হবে । ভাত একটু শক্ত থাকতে নামিয়ে নিন। মশারির নেটে ঢেলে দিয়ে ভাত ঝরঝরে করে নিন।এবার দুধে ভেজানো জাফরান দিয়ে অথবা অতি সামান্য কামধেনু রঙ দিয়ে ভাত সামান্য ঝাঁকিয়ে নিন।
২। মটন বিরিয়ানি
মাংসের জন্য: মাটন ১ কেজি (৮ থেকে ১০ টুকরা)। বিরিয়ানির মসলা ১ চা-চামচ। গোলমরিচ-গুঁড়া ৩,৪ চা-চামচ। আলু বোখারা ৫,৬টি। এলাচগুঁড়া আধা চা-চামচ। দারুচিনি-গুঁড়া আধা চা-চামচ। জায়ফল ও জয়ত্রি গুঁড়া আধা চা-চামচ। মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ। লবণ স্বাদ মতো। টক দই ১ কাপ। টমেটো সস আধা কাপ। কেওড়ার জল ২ চা-চামচ। তেল পরিমাণ মতো। আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ। রসুনবাটা আধা টেবিল-চামচ। কাঁচামরিচ ৭,৮টি। ঘি ১/৪ কাপ। পেঁয়াজ-বেরেস্তা ১ কাপ। আলু ২টি (বড় কিউব করে কেটে নেওয়া)। জর্দার রং সামান্য।
তৈরি:- একটি পাত্রে মাংস, টক দই, টমেটো সস, মরিচ, জায়ফল. জয়ত্রী, এলাচি, দারুচিনি গুঁড়া, আদা ও রসুন বাটা, পরিমাণ মতো লবণ, কেওড়ার জল, ঘি, সামান্য জর্দার রং, পরিমাণ মতো তেল এবং অর্ধেক পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে মাখিয়ে তিন, চার ঘণ্টা মেরিনেইট করতে হবে। আলুগুলো সামান্য জর্দার রং আর লবণ মাখিয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে।
মাংস মেরিনেইট হয়ে গেলে প্রয়োজন মতো জল দিয়ে রান্না করে নিতে হবে। রান্না শেষে ভাজাআলু ও আলু বোখারা দিয়ে মাখা মাখা করে নামিয়ে রাখতে হবে।
পোলাওয়ের জন্য:
বাসমতি চাল আধা কেজি (ধুয়ে ২০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখা)। শাহিজিরা ১/৪ চা-চামচ। দারুচিনি ১,২ টি। এলাচ ৩,৪ টি। লবঙ্গ ৩,৪ টি। কেওড়ার জল ১ চা-চামচ। ঘি ২ টেবিল-চামচ। লবণ স্বাদ মতো। চিনি সামান্য। তরল দুধ ১ কাপ। আদাবাটা আধা চা-চামচ। লেবুর রস ১ টেবিল-চামচ। জল পরিমাণ মতো।
একটি প্যানে বা রাইস কুকারে তেল ও ১ টেবিল-চামচ ঘি দিয়ে গরম করে একে একে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, শাহি জিরা, আদাবাটা দিয়ে একটু নেড়ে চাল দিয়ে দিতে হবে।এরপর পরিমাণ মতো জল ও দুধ, লবণ, চিনি, কেওড়ার জল, লেবুর রস দিয়ে পোলাও রান্না করে নিন। পোলাও রান্না হয়ে গেলে অর্ধেক তুলে নিয়ে মাটন ঢেলে দিয়ে বাকি পেঁয়াজ বেরেস্তা, ১ টেবিল-চামচ ঘি, কাঁচামরিচ ছিটিয়ে দিয়ে বাকি পোলাওটুকু উপরে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মতো দমে দিতে হবে। রাইস কুকারে করলে অন বাটন চালু করে দিতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পোলাও হালকা মিশিয়ে দিলে হয়ে যাবে মজাদার মাটন বিরিয়ানি। চুলায় করলে কম আঁচে দম দিতে হবে।
বিরিয়ানির দাম :- প্রতি প্লেটের দাম ১৩০ টাকা। এখানকার দোকানগুলোতে প্রতি প্লেট বিরিয়ানির দাম গড়ে ৯০-১১০ টাকা। খাসির কাচ্চি ১১০ টাকা, আর খাসির বিরিয়ানির দাম পড়বে ১০০ টাকা। প্রতি প্লেট মোরগ-পোলাওয়ের দাম পড়বে ১১০ টাকা। মুরগির বিরিয়ানির দাম ১৩০ টাকা আর খাসির কাচ্চির জন্য গুনতে হবে ১৫০।
ভালো বিরিয়ানি:-
হায়দরাবাদের হায়দরাবাদি বিরিয়ানি, তামিলনাড়ুর আম্বুর বিরিয়ানি ,কর্নাটকের উপকূলের ভাটকলি বিরিয়ানি , কেরলের কোঝিকোর, তালাসেরি এবং মালাপ্পুরম অঞ্চলে মালাবার বিরিয়ানি সবচেয়ে ভালো।
কলকাতার যে কোন ৫ তারা হোটেল বা রেস্তোরাঁত কিন্তু সবসময়ই বিরিয়ানি খাওয়ার যোগ্য। রেস্তোরাঁ গুলি হল-সিরাজ, আরসালান, আয়ুধ। এছাড়া রয়েছে আরও নানা নামকরা রেস্তোরা। তবে এগুলিতে দাম ২০০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতি প্লেট।
ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য বা মার্কিন মুলুকেও প্রচুর জায়গায় বিরিয়ানি ভালো।
চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি বাংলা বিরিয়ানি রেসিপি বাংলা চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি