‘ছটফট করতে করতে মারা গেল ছেলেটা। এটা কীরকম বিচার চাইছেন ডাক্তাররা!’ হা হুতাশ সন্তানহারা মায়ের

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now
Instagram Channel Follow Now

আর জি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এদিন আরও এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটল। চিকিৎসকদের কর্মবিরতি এবং হাসপাতালের পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার ফলে এক ২৭ বছরের তরুণের জীবন অকালে শেষ হয়ে গেল বলে অভিযোগ । মৃতের নাম বিক্রম দাস, পেশায় গাড়িচালক। তাঁর মৃত্যুর পর শোকস্তব্ধ পরিবারের কণ্ঠে ধ্বনিত হল শুধু একটাই আর্জি— “আমাদের সন্তানের মতো যেন আর কারও সন্তানকে এভাবে হারাতে না হয়।”

শুক্রবার ভোরবেলা কোন্নগরের বিবেকনগরে বিক্রমের পা একটি ডাম্পারের নীচে চাপা পড়ে। তাঁর দু’টি পায়ের উপর দিয়ে ডাম্পারটি চলে যায়। স্থানীয় পুলিস তাঁকে উদ্ধার করে শ্রীরামপুরের ওয়ালস হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে।

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMJ-knQswsK61Aw?hl=en-IN&gl=IN&ceid=IN:en

পরিবারের সদস্যরা জানান, সকাল ন’টা নাগাদ তাঁরা আর জি কর হাসপাতালে পৌঁছন। কিন্তু জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁদের বলা হয়, “ডাক্তার নেই, অন্য কোথাও নিয়ে যান।”

তখনই শুরু হয় এক দীর্ঘ ও মর্মান্তিক অপেক্ষা। মা কবিতা দাস, যিনি নিজে বাংলার এক মেয়ে, ছেলের যন্ত্রণায় ছটফটানি দেখে কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তারদের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “ছেলেটা সাদা হয়ে যাচ্ছে, ডাক্তারবাবু কিছু করুন।” তবে কর্মবিরতির কারণে কোনো চিকিৎসক তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ । দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর বিক্রমের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।

পরিবারের আর্জি ছিল, তাঁদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। তাঁরা হাসপাতালের আউটডোর বিভাগে টিকিট কেটে চিকিৎসা পাওয়ার চেষ্টা করেন। একজন কর্মী এসে বিক্রমের পায়ে ব্যান্ডেজ করেন। কিন্তু তাতেও কোনো উন্নতি হয়নি। এরপর এক্স-রে করার প্রক্রিয়ার সময়েই বিক্রম মারা যান বলে পরিবারের দাবি।

বিক্রমের বাবা সুজিত দাস বলেন, “আমরা বারবার চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছি কিছু একটা করার জন্য, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।” বিক্রমের মৃত্যুতে মা কবিতা দাস বলেন, “ছটফট করতে করতে মারা গেল ছেলেটা। এটা কীরকম বিচার চাইছেন ডাক্তাররা? আমাদের মতো যেন আর কেউ সন্তানহারা না হয়।”

আর জি কর হাসপাতালের সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় অবশ্য চিকিৎসায় কোনো গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, “চিকিৎসার গাফিলতি হয়নি। উনি ন’টার আগে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সাড়ে বারোটায় মারা যান। এর মাঝে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল তাঁকে চিকিৎসা করেছেন। বিক্রম ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। তাঁর ফিমার বোন দুটি ভেঙে গিয়েছিল এবং প্রচুর রক্তপাত হয়। মাথার আঘাত কতটা গুরুতর তা বোঝার জন্য সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল। সেখান থেকে বেরোনোর পর অবস্থার অবনতি হয়। আমরা চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচাতে পারিনি।”

আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের মুখপাত্র অনিকেত মাহাতও চিকিৎসার গাফিলতি অস্বীকার করেছেন। তবে, তাঁদের আন্দোলনের কারণ তুলে ধরে বলেন, “আমাদের দাবিগুলো ন্যায্য এবং এই পরিস্থিতি আমাদের আন্দোলনকে প্রভাবিত করছে না।”

এই ঘটনার পরও পরিবারের শোক এবং বেদনার মধ্যে থেকে গেল একটি প্রশ্ন— ডাক্তারদের আন্দোলন কি রোগীর জীবনহানির মূল্য দিতে পারে?

Author

এই খবরটা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করুন, যার এটা জানা দরকার

Make your comment