উচ্চমাধ্যমিকে ৭৫% নম্বর, করোনায় মৃত শুভ্রজিতের ইচ্ছে ছিল উকিল হবে, লড়বে অন্যায়ের বিরুদ্ধে

Loading

উচ্চমাধ্যমিকে ৭৫% নম্বর, করোনায় মৃত শুভ্রজিতের ইচ্ছে ছিল উকিল হবে, লড়বে অন্যায়ের বিরুদ্ধে

ইছাপুর: স্বপ্ন ছিল উকিল হবে। অন্যায়-অবিচারের শিকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে। তাঁদের সুবিচার এনে দেবে। ছোট থেকে তাই স্কুলের বইয়ের বাইরে ছেলেটার বেশি ঝোঁক ছিল আইনকানুনের প্রতি। সারাদিন মোবাইলে-ইন্টারনেটে মুখ গুঁজে ঘাঁটাঘাঁটি করত সে সব নিয়েই।

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMJ-knQswsK61Aw?hl=en-IN&gl=IN&ceid=IN:en

উচ্চমাধ্যমিকের পরই ল’কলেজে ভর্তি হব।”- পরীক্ষা দিয়ে ফিরে রাতে খাবার টেবিলে বসেই ঘোষণাও করে দিয়েছিল ইছাপুরের আঠেরোর কিশোর শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।

গতকাল উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়েছে। তারপরই দেরি করেননি বাবা বিশ্বজিৎবাবু। ফলপ্রকাশের খবর পেতেই ইন্টারনেট থেকে ছেলের রেজাল্ট ডাউনলোড করেছেন। মনিটরের পর্দায় চোখ রেখে জল ধরে রাখতে পারেননি আর! জ্বলজ্বল করছে -‘শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ৩৬০’। অর্থাৎ ৭৫.২৩ শতাংশ। ল’ কলেজে ভর্তির জন্য যথেষ্ট।

কিন্তু তারপরও যে ল’কলেজে গিয়ে ভর্তির লাইনে দাঁড়ানোর জন্য শুভ্রজিৎ আর নেই। সে হারিয়ে গিয়েছে চিরদিনের মতো, পৃথিবী থেকে। করোনা নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে, বিনা চিকিৎসায় চলে গিয়েছে মহাশূন্যের পথে।

শুক্রবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে কখন! ঘরে আলো নিভিয়ে অন্ধকারে চুপ করে বসে আছেন বিশ্বজিৎ। পাশে সদ্য পুত্রহারা স্ত্রী। মৃদু ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ। “ছেলে কোনও অবিচার সহ্য করতে পারত না। কোনও মানুষের প্রতি অন্যায় হতে দেখলে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ত।

তা সে সিনেমাতেই হোক, বা বাস্তব জীবনে। দেখত আর বলত যে, ‘বাবা! আমি উকিল হলে এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াব। বিচার পাইয়েই ছাড়ব।’ কিন্তু ওর সঙ্গেই এমন অবিচার হতে হল!” গলা বুজে আসছিল সন্তান হারানো পিতার।

কিন্তু কান্না আর বিলাপের মাঝে জ্বলছে প্রত্যাঘাতের আগুনও। বিশ্বজিৎবাবু বলছেন, “শুনে নিন, আমি থেমে থাকব না। ছেলের আস্থা ছিল যার উপর, যাকে হাতিয়ার করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়বে ভেবেছিল, সেই আইনকে হাতিয়ার করে জবাব নেব। আইনের পথেই শুভ্রজিতের মৃত্যুর বিচার হবে লোকগুলোর। যাদের জন্য আজ আমি সর্বস্বহীন।”

Author

Share Please

Make your comment