“রবিঠাকুরের বাড়ি গিয়েছি নিঃশব্দে তোমার অস্তিত্ব খুঁজতে” লাবণ্যকে লেখা অমিতের চিঠি

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now
Instagram Channel Follow Now

শিলং-এর চিঠি

প্রিয় লাবণ্য,

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMJ-knQswsK61Aw?hl=en-IN&gl=IN&ceid=IN:en

              কেমন আছো? আশা করি ভালই আছো। শোভন বাবুও ভালই আছেন আশা করি। আচ্ছা লাবণ্য মনে পড়ে আমাকে? নাকি জোর করে মন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছ? তাতে অবশ্য আমি কোন দোষ দেখিনা। সেই যে আমি চলে এলাম তোমায় ফেলে কেতকীর হাত ধরে জানো তারপর অনেক ভেবেছি তোমার কাছে যাই কিন্তু পারিনি। তাই আজ এত বছর পরে শিলং গিয়ে পাহাড়ের প্রতিটা কোণে শুধু তোমায় খুঁজেছি লাবণ্য।

 

সুব্রত সান্যাল

           কোথায় না কোথায় গিয়েছি আমি… মাওলিলঙ এর প্রতিটা বাঁকে সুন্দর করে সাজানো ফুলের গাছের সারির মধ্যে .. রুট ব্রিজে আসা প্রতিটা পর্যটকের মধ্যে শুধু তোমায় খুঁজে গেছি আমি। ডাওকী এর স্বচ্ছ জলের মধ্যে ভেসে থাকা নুড়ি পাথর গুলো যখন দেখছিলাম তখন বিশ্বাস করো লাবণ্য স্মৃতিপথে ভেসে আসছিলো তোমার আমার wards লেকে হাত ধরে কাটানো সেই সুন্দর মুহূর্তগুলো। পথিমধ্যে হঠাৎ পাওয়া বরহিল জলপ্রপাতের উচ্ছল জলরাশি তোমার উচ্ছল হাসি কে মনে করাচ্ছিল।

             আজ এতো বছর পরে ফিরে এসে আমি তোমার অস্তিত্বের প্রতিটা মুহূর্ত অনুধাবণ করেছি লাবণ্য শিলং থেকে মাওলিলঙ যাবার স্বপ্নময় কুয়াশা ঘেরা রাস্তায়। প্রতিটা বাঁকেই মনে হয়েছে এই বুঝি তোমার গাড়ির সাথে আমার গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা লাগলো ঠিক যেমন করে হয়েছিল আমাদের প্রথম পরিচয়। কিন্তু হায় অদৃষ্ট আমি সেদিন তোমায় চিনতে পারিনি। বলা ভালো তোমার মতো বাস্তব জ্ঞান যুক্ত নারীর কাছে রোম্যান্টিক মনের এই আমি সেদিন অনুপযুক্ত বলেই বিবেচিত হয়েছিলাম। তাইতো আমি রবিঠাকুরের বাড়ি গিয়েছি নিঃশব্দে তোমার অস্তিত্ব খুঁজতে …পুলিশবাজারের বর্ণময় আলোকছটার চেয়ে পাহাড়িয়া গাঁও আমায় বেশি আকর্ষিত করেছে লাবণ্য সে শুধু আমাদের অতীত কে খুঁজে বেড়াতে গিয়ে ।

            কেতকী সত্যিই আমার কাছে নিত্যদিনের ব্যবহার্য ঘড়ার জল যাঁকে ছাড়া আমার দৈনন্দিন জীবন অচল কিন্তু তুমি ছিলে আমার কাছে ঝর্ণার জলের মতো যাঁকে দুচোখ ভরে শুধু দেখে যেতে হয়. .আজ Nohkalikai falls.. Nohsngithiang Falls (also known as the Seven Sisters Waterfalls) দেখতে দেখতে আমি শুধু একথাই ভেবে গিয়েছি। যখন Mawsmai cave এ ঢুকলাম প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো গুহার কোনো এক আড়াল থেকে তুমি আমার সামনে চলে আসবে। ক্যাথিড্রাল চার্চের স্নিগ্ধ শান্ত পরিবেশে আমি মনে মনেই দোষ স্বীকার করেছি লাবণ্য বিশ্বাস করো..অষ্টাদশী কিশোরীর মতো এলিফ্যান্ট ফলস এর উচ্ছল জলরাশি আমায় শুধু তোমাকেই মনে পড়িয়েছে।

          শিলং পিক এর চূড়ায় উঠে প্রতিটা কোনায় কোনায় শুধু তো খুঁজেছি আমাদের ফেলে আসা পথ কে… চেরাপুঞ্জির ছবির মতো রাস্তা..মেঘে ঢাকা উপত্যকা।.ছড়ানো ছিটানো রংবেরঙের বাড়ি আর নিঃস্তব্ধ চার্চ আমায় বিহ্বল করে তুলেছিল। তাই কি তুমি নেই বলেই চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি আমি পেলাম না.. কিন্তু আমি দুর্বল হইনি লাবণ্য। তাহলে কেতকীর কাছে যে আমি অজান্তেই দোষী হয়ে যাবো। তাই ফিরে গেলাম। উমিয়াম লেকের ধার ঘেঁষে যখন আমার গাড়িটা ছবির মত রাস্তা দিয়ে শিলং এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিলো তখন আমার মনের ভেতর যে দ্বন্দ্ব চলছিল তা তুমি বুঝবে না.. লাবণ্য.. সত্যিই তুমি তা বুঝবে না..তাই ফিরে গেলাম।

         আবার কবে আসবো এখানে বা আদৌ আসব কিনা জানিনা। তুমি শোভন বাবুকে নিয়ে সুখে থেকো… ভালো থেকো। বিদায়।

ইতি,
তোমার অমিত

Author

এই খবরটা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করুন, যার এটা জানা দরকার

Make your comment