কলকাতার কাছেই জঙ্গল: জঙ্গল মানুষকে বরাবরই টানে। কলকাতার ইট, কাঠের সভ্যতা থেকে জঙ্গল রয়েছে অনেক দূরে। আর সেই কারণেই শহরবাসী অবসর পেলে, চোখ ও মনকে শান্ত করতেই জঙ্গলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে। এখানে কলকাতার কাছেই চারটি জঙ্গল নিয়ে আলোচনা করা হল।
সুন্দরবন ভ্রমণ
নিঃসন্দেহে পৃথিবীর দশম আশ্চর্য হিসেবে সুন্দরবন (Sundarban)কে লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে। এই বন প্রাকৃতিক বিস্ময়ের নাম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। এই জঙ্গলে রয়েছে ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী। এই জঙ্গলের ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির। এছাড়া রয়েছে বিষাক্ত সাপ। বড় ভয়ংকর সুন্দর এই সুন্দরবন। ‘সুন্দরী’ গাছের নাম থেকেই এই জঙ্গলের নাম সুন্দরবন হয়েছে বলে অনুমান করা হয় ৷
সুন্দরবন কিভাবে যাবেন
মানুষখেকো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এই জঙ্গলে বাস করে। গদখালিকে বলা হয় সুন্দরবনের প্রবেশ দ্বার। প্রথমেই আসতে হবে গদখালি। সেখান থেকে লঞ্চে করে যেতে হবে সুন্দরবনে। যদি ট্রেনে করে আসতে হয়, তাহলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ক্যানিংগামী ট্রেন ধরতে হবে। ক্যানিং এ নেমে টোটো, অটো বা ট্যাক্সি করে গদখালি। সেখান থেকে লঞ্চে করে আপনি ঘুরতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আগে থেকে লঞ্চ ভাড়া করে রাখা ভালো।
সুন্দরবন থাকার হোটেল
রাজ্য পর্যটন বিভাগের ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে সজনেখালিতে। যার ভাড়া 2000 থেকে 3000 টাকা (প্রতি রুম)। ফোন নং – (O3218) 214960। এছাড়া থাকতে পারেন বনানী রিসর্টে ফোন নং – (O3218) 67002। সুন্দরবনের পাখিরালয়, দয়াপুর এলাকায় প্রচুর বেসরকারি হোটেল, লজ রয়েছে।
সুন্দরবনে কী দেখা যায়?
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকা, পাখিরালয়, সজনেখালি ওয়াচ টাওয়ার, মিউজিয়াম, কচ্ছপ পুকুর, কুমীর পুকুর, সুধন্যখালি ওয়াচ টাওয়ার, দোবাঁকি ওয়াচ টাওয়ার, নেতিধোপানি ওয়াচ টাওয়ার, গাজিখালি, পিরখালি, পঞ্চমুখানি, বনবিবি ভারানি সহ আরও একাধিক দ্রষ্টব্য স্থান রয়েছে৷
মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি (Mahananda Wildlife Sanctuary)
স্থানীয়রা এই জায়গাকে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলও বলেন। এই জঙ্গলে হাতি লেপার্ড রয়েছে। শিলিগুড়ে থেকে এই জঙ্গল রয়েছে মাত্র ১৮ কিমি দূরে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার থেকে শুরু করে হরিণ, সম্বর, হাতি সবই দেখতে পাবেন এই জঙ্গলে।
মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারিতে কোথায় থাকবেন?
এই জঙ্গলে নিশিযাপনের জন্য রয়েছে বনবাংলো। তবে তা রয়েছে সুকনা ও কালিঝোরায়। এছাড়া PWD-র বনবাংলো রয়েছে। উত্তরবঙ্গ ভ্রমণের সময় এই জঙ্গল ঘুরে দেখা যেতে পারে।
বেথুয়াডহরী ভ্রমণ
এই জঙ্গল নদিয়া জেলায় অবস্থিত। কলকাতা থেকে দিনের দিনে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন। বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্যটি ৩৪ নং জাতীয় সড়কের পাশে বেথুয়াডহরী শহরের কাছেই অবস্থিত। এই জঙ্গলে দেখা যাবে চিত্রা হরিণ, বেজী, খরগোশ দেখা যায়। সরীসৃপদের ভেতরে দেখা যায় অজগর, গুই সাপ এবং ঘড়িয়াল। এখানে ময়ূরের দাপাদাপি, হরিণের গতিবিধি দর্শকদের মনবিমোহিত করে তোলে। এখানে বাঘ দেখা যায় না, বড় বড় ময়াল সাপ মনের কোণে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
বেথুয়াডহরীতে থাকার জায়গা
বেথুয়াডহরী জঙ্গলে আলাদা করে থাকার জায়গা নেই। তবে শহরের মধ্যে যথেষ্ট হোটেল ও লজ রয়েছে। সেখানে থাকতে পারেন। তবে বেথুয়াডহরী দেখতে, থাকার প্রয়োজন নেই।
পারমাদন ফরেস্ট বা বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য
বনগাঁ থেকে মোটামুটি ৩০ কিমি দূরে এই এই অভয়ারণ্য অবস্থিত।
পারমাদন ফরেস্ট যাবেন কিভাবে
স্টেশন থেকে ভ্যান বা টোটো ধরে সোজা পৌঁছে যেতে হবে মতিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে। ভ্যানে করে মিনিট পনেরো সময় লাগে। এরপর উঠে পড়ুন বাসে। পারমোদন ফরেস্টে যেতে হলে আগে নামতে হবে কলমবাগান বাজারে। সেখান থেকে অটো ধরে তবেই পারমোদন ফরেস্ট। বাসে প্রায় ৪০ মিনিট পর কলমবাগান বাজারে নেমে অটো ধরতে হবে। এখান থেকে অটোয় পারমোদন ফরেস্ট যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট।
মাথায় রাখতে হবে এই অভয়ারণ্যে এন্ট্রি ফ্রি নয়। প্রবেশমূল্য ১৫০ টাকা।
ইছামতী নদীর গা ঘেঁষে শিমুল, অর্জুন, শিশু, শিরীষ গাছের ভিড়ে হারিয়ে যেতে পারেন এখানে। অসংখ্য বাঁদর, ময়ূর আর খরগোশের আনাগোনা এই অভয়ারণ্যে। আর রয়েছে অজস্র পাখি। শঙ্খচিল, নীলকণ্ঠ, ফুলটুসির মতো পাখি ।
এছাড়া এখানে প্রায় ২০০ হরিণ আছে। ইছামতীর ধারে ৬৮ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে পুরো অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। ভিতরে চিলড্রেন্স পার্ক ছাড়াও রয়েছে ছোট্ট একটা চিড়িয়াখানা আর বন দফতরের ট্যুরিস্ট লজ।
ইছামতীর বুকে নৌকোভ্রমণ : অভয়ারণ্য থেকে ফেরার পথে ইছামতীর বুকে নৌকোভ্রমণ করাটা কিন্তু আবশ্যিক। মাঝিভাইকে বলে নৌকো নদীর একটু গভীরে নিয়ে গেলেই নদীর প্রশস্ত রূপ প্রকট হয়। কোথাও নদীর দু’ধারে ঘন বাঁশঝাড়, কোথাও বা আলে ঘেরা মেঠোপথ। সূর্যাস্তের সময় ছবি তোলার জন্য একদম মনোরম পরিবেশ।
নীল কুঠী – এই অভয়ারণ্যের পাশেই রয়েছে নীল কুঠী । মেলে গাইডও। ১৮৫৯ সালে প্রতিস্থাপিত এই কুঠী সাক্ষী নীল চাষীদের ওপর ইংরেজদের প্রবল অত্যাচারের। কলকাতার কাছেই জঙ্গল