Biswakarma Puja: বিশ্বকর্মা পুজোর দিন মাংস কেন খেতে হয়?

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now
Instagram Channel Follow Now

বিশ্বকর্মা পুজো হল শিল্প, নির্মাণশিল্প ও কারিগরি কর্মের দেবতা বিশ্বকর্মার আরাধনা। এই পুজোটি মূলত কারখানা, ওয়ার্কশপ, গ্যারেজ এবং যেকোনো প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষেরা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে পালন করে। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর আরও একটি প্রচলিত প্রথা রয়েছে, যা হল মাংস খাওয়ার রীতি। অনেকেই ভাবতে পারেন, কেন দেবতার পুজোর দিন মাংস খাওয়া হয়? এর পিছনে রয়েছে সামাজিক ও ঐতিহ্যগত নানা কারণ।

### প্রথাগত কারণ

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMJ-knQswsK61Aw?hl=en-IN&gl=IN&ceid=IN:en

বিশ্বকর্মা দেবতাকে শারীরিক শ্রম, দক্ষতা এবং কারিগরি ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পুজো সাধারণত শিল্পী, কারিগর, নির্মাণশিল্পী, এবং যন্ত্রপাতি চালনার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের মধ্যেই জনপ্রিয়। এই পেশায় জড়িত ব্যক্তিদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়, শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়। মাংসকে প্রাচীনকালে শক্তি ও পুষ্টির উৎস হিসাবে গণ্য করা হত। তাই এই দিনটিতে মাংস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের শক্তি পুনঃপ্রাপ্তি এবং উজ্জীবন ঘটানোর এক ধরনের প্রচলন শুরু হয়েছিল।

### পুজোর সাথে মাংসের সম্পর্ক

বিশ্বকর্মা পুজোকে অনেকেই গণেশ চতুর্থী বা দুর্গাপুজোর মতো নিখুঁত ভক্তির দিন হিসেবে বিবেচনা করেন না। এটি মূলত একটি কর্মজীবী মানুষের উৎসব। পুজোর দিনটি কর্মরত মানুষদের একটি বিরতি বা ছুটি হিসেবে দেখা হয়, যেখানে তাঁরা আনন্দ করেন, খাওয়াদাওয়া করেন, এবং পারিবারিকভাবে দিনটি উপভোগ করেন। এই আনন্দের অংশ হিসেবে মাংস খাওয়া, বিশেষত পাঁঠার মাংস, এক ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস হয়ে উঠেছে।

### গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলের পার্থক্য

বিশ্বকর্মা পুজোর সময় মাংস খাওয়ার প্রচলন মূলত গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। প্রাচীনকাল থেকেই, যখন শিল্পপতি এবং শ্রমিকেরা এই পুজো করতেন, তখন পুজোর দিনটি ছিল উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাধারণত পুজোর পরে তাঁরা মাংস ও ভোজনে মেতে উঠতেন। শহরাঞ্চলেও এই প্রথাটি রয়ে গেছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এর সঙ্গে আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিছু মানুষ পুজোর দিন নিরামিষ আহার করলেও, মাংস খাওয়ার প্রথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অব্যাহত রয়েছে।

### ধর্মীয় দিক

বিশ্বকর্মা পুজোর সাথে মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা নেই। হিন্দু ধর্মের অন্যান্য পুজো বা উৎসবগুলিতে সাধারণত নিরামিষ আহার করার প্রথা থাকে, যেমন সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মী পুজো বা দুর্গা পুজোর অষ্টমী। তবে বিশ্বকর্মা পুজোতে সেই রকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বরং এই পুজোর পর অনেকেই তাঁদের প্রিয় খাদ্য হিসেবে মাংসের আয়োজন করে থাকেন। এর সাথে যুক্ত রয়েছে শ্রমজীবী মানুষদের নিজস্ব রীতি এবং ঐতিহ্য।

### আধুনিক যুগের ধারা

আজকের যুগে বিশ্বকর্মা পুজোর সময় মাংস খাওয়ার প্রচলন এখনও বহাল রয়েছে। যদিও অনেকেই ভিন্নধর্মী খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করেছেন, তবুও কারিগরি কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা তাঁদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। পুজোর দিন একসঙ্গে মাংস খাওয়া কর্মজীবী মানুষের কাছে আনন্দ এবং উদযাপনের এক বিশিষ্ট রূপ।

সর্বোপরি, বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে মাংস খাওয়ার রীতির মূলে রয়েছে ঐতিহ্য, সামাজিক প্রথা এবং শারীরিক শক্তি পুনর্নবীকরণের ভাবনা। শ্রমজীবী মানুষেরা এই দিনটিকে তাঁদের কায়িক পরিশ্রমের স্বীকৃতি ও উদযাপনের দিন হিসেবে বিবেচনা করেন। তাই মাংস খাওয়া শুধু পেট ভরানোর নয়, বরং এটি শক্তি ও পুষ্টি পুনরুদ্ধারের এক উৎসবমুখর আয়োজন, যা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে।

Author

এই খবরটা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করুন, যার এটা জানা দরকার

Make your comment