একাধিক খুন ও যৌন নির্যাতন! বর্ধমানের ‘চেন ম্যান’-কে মৃত্যদণ্ড দিল আদালত
বর্ধমান: অবশেষে ধরা পড়ল বর্ধমানের চেন ম্যান কিশোরীর উপর শারীরিক নির্যাতন ও খুনের চেষ্টা করেন। মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। বর্ধমানের চেন ম্যান কামরুজ্জামান সরকারকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন কালনা মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারপতি।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৯-এর ৩০ মে। সেদিন কালনার সিঙ্গেরকোণ গ্রামের বাড়িতে একাই ছিল এক কিশোরী। সেই সুযোগে তাঁর চরম সর্বনাশ করে এমনকি তাঁকে খুন করে কামরুজ্জামান।
কিশোরীর মা বাড়িতে ফিরে দেখেন মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পরে আছে। তড়িঘড়ি তাকে ভর্তি করা হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। কয়েক দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যায় ওই কিশোরী। সেই মামলাতেই সোমবার কামরুজ্জামানকে সরকারকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত।
এদিকে এই মামলার তদন্ত চলা কালীন উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানিয়েছে, কোনও বাড়িতে পরিবারের মহিলা সদস্য একা থাকলে, সেই সব বাড়িগুলিকে টার্গেট করত কামরুজ্জামান। বিদ্যুত দপ্তরের কর্মী পরিচয় দিয়ে সে ঢুকে পড়ত বাড়িতে।
তারপর সুযোগ বুঝে গলায় চেন পেঁচিয়ে মহিলাদের খুন করত এবং মৃত্যুর পর মহিলার সঙ্গে যৌনতা মেটাতে মেতে উঠত কামরুজ্জামান। তাই চেন কিলার নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল বিকৃতকাম ওই যুবক।
সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ বিশেষ পুলিশি পাহারায় আদালতে নিয়ে আসা হয় কামরুজ্জামানকে। তখন তার হাঁটাচলা ছিল বেশ স্বাভাবিক। একেবারেই কাউকে সেভাবে বিবেচনায় নেন না ধরনের হাবভাব। যেন কিছুই হয়নি- এমনই তার দেহ ভঙ্গিমা।
এরপর বেলা ১টা বাজার আগে তাকে আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ম অনুসারে সাজা ঘোষণার আগে বাদি বিবাদির বক্তব্য শোনেন বিচারক।
দোষী সাব্যস্ত কামরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ, মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এরপরই কালনার সিঙ্গেরকোনে নাবালিকার বাড়িতে বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ, হত্যা, শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় তাকে মৃত্যুদন্ডের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।
সে কথা শুনেই কেঁপে ওঠেন সিরিয়াল কিলার চেন ম্যান কামরুজ্জামান। এরপর স্থির হয়ে যান। আদালত কক্ষ থেকে তাকে কড়া পাহারায় গাড়িতে তোলেন পুলিশ কর্মীরা। সেই সময় আবারও কামরুজ্জামান জানান, তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
তার আইনজীবী অরিন্দম বাজপেয়ী জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করবেন। কামরুজ্জামানের স্ত্রী জাহানারা সিং দাবি করেছেন যে তাঁর স্বামী নিরপরাধ।
রায়ের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সিঙ্গেরকোন এলাকায় খুন হওয়া নাবালিকার আত্মীয়রা। কী সাজা হয় শুনতে আদালতে হাজির হয়েছিলেন তারা। নাবালিকার মা বলেন, ‘মেয়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছিলাম। এই রায়ে আমরা খুশি’।
কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরও ১৩টি মামলা চলছে। এর বেশিরভাগই একই কায়দায় নারীদের খুনের পর তাদের ওপর বিকৃত যৌন লালসা মেটানোর অভিযোগ রয়েছে। ১০ টি মামলা চলছে কালনা আদালতে। ২ টি মামলা হুগলি জেলা আদালতে বিচারাধীন। ১ টি মামলা রয়েছে বর্ধমান আদালতে।
২০১৩ সাল থেকে পর পর হত্যা মামলা রয়েছে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। শেষ ঘটনাটি ঘটে কালনার সিঙ্গেরকোনে। এক বছর ধরে শুনানির পর সোমবার সেই ঘটনায় ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল আদালত।