বিনা অপরাধেই অপমানের শিকার ৫৪ শতাংশ মেয়ে, সার্ভেতে উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য
আমরা মেয়েরা যে বয়েসেরই হই না কেন, প্রত্যেকেই কোন না কোন সময়ে অপমান অবমাননার শিকার হয়েছি। কখনও প্রিয়জনের কাছ থেকে , কখনও বা আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে, আবার কখনও বন্ধু বান্ধবদের থেকে। কিছু কিছু অপমানের দাগ তো সারাজীবন থেকে যায় প্রত্যেক মেয়ের জীবনে। অকারণে, বিনা অপরাধেই বারবার লাঞ্ছিত হন অনেকে।
সামনেই আন্তর্জাতিক শিশু কন্যা দিবস। মেয়েদের সুরক্ষার কথা ভেবেই ২০১২ সাল থেকে ১১ই অক্টোবর এই দিনটি পালন করা হচ্ছে। ঠিক তার আগে আগেই বিশ্বজুড়ে সার্ভে চালিয়ে পাওয়া গেছে এক উদ্বেগজনক তথ্য।
জানা গেছে প্রতিদিন বিশ্বের ৫৪ শতাংশ মেয়ে বিনা অপরাধে নানারকম অপমানের শিকার হচ্ছেন স্যোশাল মিডিয়ায়। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ – এইসব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মেয়েদের উত্তক্ত করার প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
বিশ্বের ২২ টি দেশে সার্ভে করে জানা গেছে মেয়েদেরই সোশ্যাল মিডিয়ায় টার্গেট করা হয় বেশি। নানা রকম অশালীন কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় তাদের। ইংল্যান্ডের হিউম্যানিটেরিয়ান অর্গানাইজেশন এই সার্ভের নাম দেন “স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস গার্লস রিপোর্ট”। ১৫ থেকে ২৫ বছরের ১৪ হাজার মেয়ের মধ্যে এই সার্ভেটি করা হয়। ভারত, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া,স্পেন, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, আমেরিকার মত দেশগুলিতে বিশেষ করে এই সার্ভেটি সবার আগে করা হয়।
সার্ভে চলাকালীন মেয়েরা অকপটে জানিয়েছেন কীভাবে বিনা অপরাধেই তাদের অপমানিত হতে হয় রোজ। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কখনও বা কর্মক্ষেত্রেও নানা অপমানজনক ঘটনার সাক্ষী থাকেন মেয়েরা। কখনও গায়ের রং নিয়ে, কখনও বা পোশাক নিয়ে, কখনও আবার জাত ধর্ম নিয়ে শুনতে হয় বিরূপ মন্তব্য। কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে অনেকে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়েও পরেছেন। একই সঙ্গে বেড়েছে অপমানের জ্বালায় আত্মহত্যা করার প্রবণতা।
মেয়েরা জানান, এই আধুনিক যুগেও নিজেদের পছন্দ মত থাকার স্বাধীনতা নেই তাদের। নিজের মত প্রকাশ করারও স্বাধীনতা নেই। বিশেষ কিছু পোশাক পরলেই তাদের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় ‘নোংরা মেয়ে’ বিশেষণ। জাত ধর্ম নিয়ে বিরোধী মন্তব্য করলে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত জোটে। সন্ধের পর বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে ভয় পান তারা। কারণ তারা মনে করেন এই যুগেও তাদের জন্য কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাটা যদিও আরও কিছুটা আলাদা। এখানে কিছু না বলে, না করেও মেয়েদের দিকে পদে পদে উড়ে আসে নানারকম কুপ্রস্তাব। সমাজ যে পোশাকগুলোকে সভ্য ভদ্র বলে দাগিয়ে দিয়েছে, এমনকি তেমন পোশাকে সেজে কোনো সুন্দর ছবি দিলেও অনেক সময় ভেসে আসে কুমন্তব্য, অশ্রাব্য গালিগালাজ। ‘কী কুৎসিত’, ‘হাতির মত মোটা’, ‘নোংরা মেয়ে’, ‘রাস্তায় বেরোলে দেখে নেব’, ‘আ্যসিড ছুঁড়ে মুখ নষ্ট করে দেব’ এমন মন্তব্যে ভরে যায় কমবয়সী মেয়েদের ইনবক্স।
এই অশ্লীলতার প্রতিবাদে নারীবাদীরা গর্জেও ওঠেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেলেব্রিটি থেকে সাধারণ ঘরের মেয়ে, সকলেই এই অপমানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন প্রতিদিন। তারা বিশ্বাস করেন এমনভাবে বেশিদিন মেয়েদের দমিয়ে রাখা যাবে না। মেয়েরাও মানুষ, তাই তাদেরও স্বাধীনভাবে কথা বলার, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে- সার্ভে চলাকালীন এই দাবিই মেয়েদের তরফে উঠে এসেছে বারবার।