বুড়িমার চকলেট বোম’ , জানুন ইতিহাস

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now
Instagram Channel Follow Now

লড়াই ২৪ : বাঙালির কাছে দীপাবলি মানেই পেটপুজো , আপনজনদের সঙ্গে সময় কাটানো আর বেলার শেষে সবাই মিলে বাজি ফাটানো । সে কত রকমের বাজি! তবে এর মধ্যে যে বাজি গুলির কান ফাটানো আওয়াজ ছিল সেগুলো বুরিমার চকলেট বোম নামে আজও খ্যাত। বুড়িমা অর্থাৎ অন্নপূর্ণা দাস ছিলেন একজন প্রতিভাশালী বাঙালি নারী। যে যুগে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সন্দেহ করা হতো, তারই একটা বড় উদাহরণ ছিলেন তিনি । শূন্য থেকে শুরু করে একজন সফল উদ্যোগপতি নারী হয়ে ওঠা , তার সবই আমাদের কাছে উদাহরণ ।

বুড়িমা নামে খ্যাত অন্নপূর্ণা দাস বাংলাদেশের ফরিদপুরএর এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । খুব কম বয়সে বিয়ে হয় তার। এক মেয়ে ও এক ছেলের মা হন । পরবর্তীকালে তার স্বামী সুরেন্দ্রনাথ দাসের মৃত্যু হয়। ছেলে-মেয়েরা ছোট থাকতে খুব কম স্বামীহারা হন তিনি। দেশভাগের পর তার সন্তানদের নিয়ে পূর্বতন পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ধলদিঘির সরকারি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। পেট চালাতে ধলদিঘির বাজারে সবজি বেচে সংসার চালাতেন তিনি। তার জীবন সহজ ছিল না , তিনি তার সন্তানদের নিয়ে ধলদিঘি থেকে গঙ্গারামপুরে চলে যান ।

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMJ-knQswsK61Aw?hl=en-IN&gl=IN&ceid=IN:en

গঙ্গারামপুরে বিড়ি বাঁধার কাজ করতেন। কিছুদিন পরেই নিজের বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন। দেখতে দেখতে ব্যবসা জমে যায়। ছোটখাটো একটা বিড়ির কারখানা হয় তার। এরইমধ্যে মেয়ের বিয়ে দেন বেলুড় এ। সেই সূত্রে নিজেও চলে আসেন বেলুড়ে। সেখানে প্যারা মোহন মুখার্জি স্ট্রিটে একটা দোকান সহ বাড়ি কিনে ফেলেন। বিড়ির সঙ্গে আলতা ও সিঁদুর এর ব্যবসা শুরু করেন অন্নপূর্ণা। শুধু তাই নয় বিশ্বকর্মা পূজার সময় ঘুড়ি, দোলের সময় রঙের ব্যবসাও শুরু করেন। একজন বুদ্ধিমান উদ্যোগপতির মতো ব্যবসা বড় করেন তিনি। এরইমধ্যে কালিপুজোর সময় বাজির ব্যবসা শুরু করেন তিনি , তবে তখনও নিজে তৈরি করতেন না। মহাজনের কাছ থেকে মাল কিনে বিক্রি করতেন।

পরবর্তীকালে বাজি তৈরি করতেও শিখলেন তিনি। সময়ের সাথে সাথে তার বয়সও বাড়তে থাকে । ততদিনে অন্নপূর্ণা দাসকে সবাই ‘বুড়িমা’ বলে সম্মোধন করে । এই ‘বুড়িমা’ শব্দটাকেই বাজির ব্যবসার ব্র্যান্ডিং-এ কাজে লাগালেন এবং নানা রকম বাজি তৈরি করে বিক্রি করতে শুরু করলেন তিনি । তবে সবথেকে বেশি বিখ্যাত হলো ‘বুড়িমার চকলেট বোম’।

১৯৯৬ সালে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হল যে ৯০ ডেসিবেল ও তার বেশি যাবতীয় শব্দবাজি নিষিদ্ধ। তবে তাতে ‘বুড়িমা’ ব্র্যান্ডের ব্যবসা খুব একটা মার খায়নি। পরবর্তী প্রজন্ম আলোর বাজির ব্যবসা শুরু করলেন। তবে চকলেট বোম জিনিসটা ঐ বছরই উঠে গেল। অবশ্য সেদিন দেখে যেতে পারেননি তিনি।

১৯৯৫ অর্থাৎ শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ার এক বছর আগেই প্রয়াত হন অন্নপূর্ণা দাস। আলো ও শব্দ এর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় তাকে। তিনি ছিলেন আধুনিকা। নারীদের ক্ষমতায়নের নজির হিসেবে ‘বুড়িমা ‘ এক অন্যতম নাম।

Author

এই খবরটা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করুন, যার এটা জানা দরকার

Make your comment