মালদা: ইচ্ছে থাকলে সব বাধা অতিক্রম করা যায়, তারই নিদর্শন পেশ করল মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার পিছিয়ে পড়া জনজাতির বিজয় মুশহর। দারিদ্রতা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সমস্থ বাধা পার করে এগিয়ে গিয়েছে বিজয়। উচ্চমাধ্যমিকে ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্কুলের মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বিজয়। তারপর থেকেই এই মেধাবী ছাত্রকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে এসেছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এমনকি নেতারাও।
সোমবার বিজয় মিশরের বাড়িতে হাজির হন মালদা জেলার শিশু ও নারী কল্যান ত্রান কর্মাধ্যক্ষা মার্জিনা খাতুন। এদিন বিজয় মিশরকে মিষ্টি মুখ করানোর পাশাপাশি জামা-কাপড়, ফাইল ও নিজ অর্থভান্ডার থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেন তিনি। উল্লেখ্য এবছর হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের হরিশ্চন্দ্রপুর জিপি-এর দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্কুলের সেরা তালিকায় তো বটেই, এমনকি গ্রামের মধ্যে প্রথম উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিজয়। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ গোটা গ্রামবাসী খুব খুশি বিজয়ের এই সাফল্যে।
মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের ধুমসাডাঙী গ্রামের ৯০ শতাংশ পরিবার মুশহর বলে জানা গিয়েছে। শতাধিক পরিবারের ওই গ্রামে কেউ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেনি বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন। গ্রামে এবার প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে কলা বিভাগে ৮৪ শতাংশ পেয়ে নয়া নজির গড়েছে বিজয় মুশহর।
তবে তার সাফল্যের পিছনে রয়েছে এক কঠিন সংগ্রাম। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, প্রথম শ্রেণী থেকেই সে কুপির আলোতে পড়াশোনা করেছে। পরিবারের উপর দারিদ্রতা এমন ভাবেই বড়ো থাবা বসিয়ে যে শৌচালয়ও নির্মান করা সম্ভব হয়নি। মাঠেঘাটে শৌচকর্ম সারতে হয় তাদের। কাচা মাটির বাড়িটিও জরাজীর্ন, বর্ষাকালে জোর বর্ষনে দেওয়াল ভেঙে পরার আশঙ্কা করছেন বিজয়ের বাবা পাথারু মুশহর। উজ্জলা যোজনার রান্নার গ্যাসও পৌছায়নি তাদের বাড়িতে।
বাবা পাথারু জানান, আগে গ্রামের খাল বিলে মাছ শিকার করেই চলত সংসার। কখনও ইদুর শিকার, আবার কখনও বন গুচী শিকার করে বাড়িতে চলত আমিষ-মিরামিষের ভোজন। মাছ বিক্রি করে সংসারের হাল সামলাতে হিমশিম হতে হত। পরে টিবি রোগে আক্রান্ত হলে ৮ বছর ধরে অক্ষম অবস্থায় আজ পর্যন্ত কর্মহীন তিনি। স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা করার পর টিবি রোগ সেরে গেলেও শ্রবন শক্তি হারিয়েছেন পাথারু।
মা শুকরি মুশহর বলেন, স্বামী ৮ বছর ধরে কর্মহীন, বয়স ৬০ হয়েছে। ঘরে রয়েছে একমাত্র ছেলে বিজয়, ২ মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মুরসুম অনুযায়ী এলাকার কৃষকদের ধান রোপন, জমির জঙ্গল পরিস্কার করে কোনওরকমে দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরী পাওয়া যায়। তবে তা দিয়ে আর কদিন চলবে কাজ। জব কার্ড রয়েছে, তবে সংসদে ১০০ দিনের কাজও স্বাভাবিক নেই। আর একদিকে ছেলের সাফল্যে ঘুম কেড়েছে অসহায় দম্পতির। ছেলের ভবিষ্যৎ নির্ধারনে আজ তারা দিশেহারা।
ছেলে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে এক আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তার শিক্ষক হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোনও হৃদয়বান ব্যক্তি সহযোগিতা করে, তাহলে স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে বিজয়।