বর্ধমান: বর্ধমান শহরের তেজগঞ্জে বৃদ্ধের রহস্যজনক খুনের পর্দা ফাঁস। তদন্ত করার পর অবশেষে ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত যুবকের নাম রনিত দত্ত। ১৬ জুলাই, শুক্রবার বিকেলে ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, ওই যুবক মাদকাসক্ত ছিল। নেশার টাকা জোগাড় করতেই সে খুন করার পর আলমারিতে টাকা গয়নার খোঁজ চালায়। বৃদ্ধের স্ত্রী আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে বাড়িতে ঢুকে ওই বৃদ্ধকে গলার নলি কেটে খুন করে আলমারি ঘেঁটে চম্পট দেয় দুষ্কৃতী।
বর্ধমানের তেজগঞ্জ এলাকায় ২ জুলাই এই খুনের ঘটনা ঘটে। দিনের বেলায় এই নৃশংস খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ঘটনার তদন্ত করার জন্য পুলিশ কুকুর আনা হয়। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ, ফিংগার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞরাও তদন্ত চালায়। জেলা পুলিশ সুপার জানান, বিজ্ঞানভিত্তিক নানান তথ্য ও এলাকার বিভিন্ন সিসি টিভি ফুটেজ খুনের কিনারা করতে বিশেষ সাহায্য করেছে।
মৃতের নাম গোরাচাঁদ দত্ত, বয়স ৮০ বছর। তিনি দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন। বর্ধমানের তেজগঞ্জে তিনি ও তাঁর স্ত্রী থাকতেন। স্ত্রী বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই সময় বাড়িতে একাই ছিলেন বৃদ্ধ। বোনের বাড়ি থেকে বিকেল ৪ টে নাগাদ তিনি ফিরে আসেন। বাড়িতে ঢোকার মুখে হলুদ গেঞ্জি পরা একজনকে তিনি দেখতে পান। তিনি কে, কেন এসেছেন জানতে চান গোরাচাঁদবাবুর স্ত্রী মীরা দেবী। তখন সে জানায়, কী হয়েছে ভেতরে গিয়ে দেখুন। মীরা দেবী ঘরে ঢুকে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে রয়েছে স্বামীর দেহ, ঘরের আলমারি তছনছ। চিৎকার করে ওঠেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার জানান, ঘটনাস্থলের ৫০০ মিটার দূরেই বাড়ি ধৃত রনিতের। আগে তাদের বাড়ি থেকে ওই বৃদ্ধ দুধ আনতে যেতেন। ওই বৃদ্ধের কাছে টাকা চেয়েছিল রনিত। সেই টাকা না পেয়েই সে খুন করার ছক কষে। একটি সাইকেল নিয়ে ওই দিন গোরাচাঁদবাবুর বাড়ি গিয়েছিল সে। যুবক পরিচিত বলেই সম্ভবত দরজার তালা খুলে দিয়েছিলেন গোরাচাঁদবাবু। এরপর রনিত ওই বৃদ্ধকে খুন করে। তবে আলমারি থেকে টাকা, সোনা-দানা না পেয়ে সে গোরাচাঁদবাবুর মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়।
খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে সাইকেল ও গোরাচাঁদবাবুর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা গিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার জানান, ধৃতকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তার বয়ান ও কার্যক্রমের সঙ্গে সি সি টিভির ফুটেজে পাওয়া তথ্য মিলে গিয়েছে। ঘটনার পর বাড়ির লোকরা তাকে মাদকাসক্ত থেকে মুক্ত করতে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারেও পাঠিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।