বাড়িতেই শিখে নিন পেঁয়াজ চাষের পদ্ধতি, লাগবে না কোনও রাসায়নিক সার

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now
Instagram Channel Follow Now

খুবই প্রয়োজনীয় এই সবজিটি ব্যবহৃত হয় ব্যাপক ভাবে। পেঁয়াজের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম সে পা (Allium cepa Linn) এটি লিলিয়েসি (Liliaceac) পরিবারভক্ত দ্বিবর্ষজীবী গাছ। কিন্তু বর্ষজীবী হিসাবেই চাষ করা হয়। কন্দ (bulb) উৎপাদনই পেঁয়াজ চাষের মূল উদ্দেশ্য।

খাদ্যগুন ও ব্যবহার: পেঁয়াজের খাদ্যগুন লক্ষণীয়। ১০০ গ্রাম খাওয়ার উপযুক্ত পেঁয়াজে পাওয়া যায়

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMJ-knQswsK61Aw?hl=en-IN&gl=IN&ceid=IN:en

জল – ৮৪.৩ ভাগ

শ্বেতসার-১২.৬ ভাগ

প্রোটিন – ১.৮ ভাগ

চবি/তেল – ০.১ ভাগ

আঁশ (ফাহবার) – ০.৬ ভাগ

খনিজ পদার্থ – ০.৬ ভাগ

ফসফরাস-৫০ মিগ্রা ক্যালসিয়াম-১০০ মিগ্রা, লোহা- ০.৮ মিগ্রা ভিটামিন সি- ১২ মিগ্রা। এছাড়া অন্য ভিটামিনও কিছু পরিমাণে পাওয়া যায়।

বিভিন্ন রকম ভাবে পেঁয়াজ খাওয়া যায়। কাঁচা খাওয়া যায়, স্যালাডে খাওয়া যায়, মাংস রাঁধতে পেঁয়াজের ব্যবহার অপরিহার্য। মাছ রান্নাতে ও পেঁয়াজ দেওয়া হয়। চাটনি আঁচার ও কাসুন্দিতেও পেঁয়াজের ব্যবহার করা হয়। পেয়াঁজের কলি রান্নাকরে খাওয়া হয়।

মানুষের খাদ্য ছাড়াও হাঁস মুরগী ও পশুর খাদ্য হিসাবেও পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয়।

পেঁয়াজ রপ্তানি করে ভারত বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে।

জানার বিষয়: অ্যালিল প্রোপাইল ডাই সালফাইড নামক এক প্রকার উদ্বায়ী তেল থাকার জন্য পেঁয়াজের ঝাঁঝ হয়।

এন্থোসায়েনিন (Anthocyanin) নামক এক প্রকার পিগমেন্টের জন্য পেঁয়াজের রং লাল হয়।

‘কুয়ের সিটিন’ (Quercetin) নামক পিগনেন্টের জন্য পেঁয়াজের রং হলুদ হয়।

উৎপত্তি ও বিস্তারঃ মধ্য ও পূর্ব এশিয়াকেই পেঁয়াজের আদি নিবাস বলে ধরা হয়। অনুমান করা হয় উত্তর পশ্চিম ভারতে রাশিয়ায় এবং আফগানিস্থাণে পেঁয়াজের উৎপত্তি। এখন ভারতের সব রাজ্যেই কম বেশি পেঁয়াজ চাষ করা হয়।

আবহাওয়া: বিভিন্ন আবহাওয়াতেই পেঁয়াজের চাষ করা যায়। তবে যে অঞ্চলে খুব বেশি ঠান্ডা বা গরম পড়ে না এবং খুব বেশি বৃষ্টিপাতও হয় না এমন অঞ্চলই পেঁয়াজ চাষের আদর্শ। সেজন্য বর্ষাকালে পেঁয়াজ চাষভাল হয় না।

জন্মি ও মাটিঃ অবাধ সূর্যালোক প্রাপ্ত বা ছায়াহীন এবং জলনিকাশের সুব্যবস্থা যুক্ত অপেক্ষাকৃত উঁচু অবস্থানের হালকা দোআঁশ বা পলি দোআঁশ মাটিই পেঁয়াজ চাষের পক্ষে আর্দশ। জমির, PH ৫.৮-৬.৫. এর মধ্যে হওয়া চায়। * জমি ও মাটি তৈরিঃ পেঁয়াজের শিকড় ২-৩”র বেশি নীচে যায় না। কাজেই পেঁয়াজ

চাষের জন্য জমিতে গভীর করে চাষ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে মাটি ভালভাবে ঝুরঝুরে করতে হবে। ৪-৫ বাঁর সোজাসুজি ও আড়াআড়ি ভাবে লাঙ্গল দিয়ে ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করে সমতল করতে হবে। জমি চাষের সময় একর প্রতি ৮০-১০০ কুইন্টাল জৈবসার হিসাবে হিসাবে গোবরপচা বা আবর্জনা সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিকে কয়েকটি ছোট ছোট খন্ডেভাগ করে চারি পাশে জলসেচ ও জলনিকাশের নালি রাখতে হবে।

সার প্রয়োগঃ মাটি পরীক্ষা করেই রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা ভাল। সাধারনভাবে একর প্রতি ৪৮ কেজি নাইট্রোজেন ২৪ কেজি ফসফেট ও ৪৮ কেজি পটাশ দিতে হবে। শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ ফসফেট ও পটাশ এবং অর্ধেক নাইট্রোজেন প্রয়োগ করতে হবে। এবং বাকি নাইট্রোজেন লাগানের পর চাপান সার হিসাবে দিতে হবে।

বোনার পদ্ধতিঃ (১) বীজ তলায় বীজ বুনে চারা তৈরি করে চারা মূল জমিতে লাগানো যায় (২) কন্দ সরাসরি জমিতে লাগান যায়।

বীজবোনার সময়: সাধারনত আগষ্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বোনা হয়।

সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরির পদ্ধতিমত বীজতলা তৈরি করতে হবে। বীজ বোনার পর ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে।

বীজের পরিমাণঃ এক একর জমিতে চাষ করার জন্য ২ কেজি থেকে ২.৫ (আড়াই) কেজি বীজ লাগবে। আর সরাসরি কন্দ লাগাতে গেলে মাঝারি আকারের কন্দ প্রায় ১.৫- ৪ কুইন্টাল লাগবে। ১-১.৫” ব্যাসযুক্ত কন্দই আদর্শ।

চারারোয়া বা লাগান: বীজ বোনার ৬-৭ সপ্তাহের মধ্যেই চারা তৈরি হয়ে যাবে। ৮০-১০” দূরে দূরে সারি করতে হবে এবং ঐ সারিতে ৪’-৬” দূরে দূরে চারা বসাতে হবে।

আর কন্দ বসানোর সময় এই দূরত্ব হবে ১০-১২”x৬-৮”। চারা বা কন্দ লাগানোর পরই একবার সেচ দিতে হবে।

পরবর্তী পরিচর্যা: পেঁয়াজের জমিতে আগাছা দমন অবশ্যই করতে হবে। আগাছা

নাশকও ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে ক্লোরালিন ১ কেজি সক্রিয় ২ লিটার ৪৫ শতাংশ সক্রিয় তরল বাসালিন রোয়ার সময় প্রয়োগ করতে হবে অথবা ৩১/ কেজি ৩০ শতাংশ তরল স্টম্প ৫০০ লিটার জলে গুলে চারা রোয়ার পর পরই স্প্রে করতে হবে তাছাড়াও ২-৩ বার হাত নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হবে।

পেঁয়াজের জমি সব সময় রসাল রাখতে হবে। সুতরাং চারা বসানোর পর প্রথমদিকে ৪-৫দিন পর পর ও পরে ১০-১৫ দিন পর পর প্রয়োজন ভিত্তিতে জ্বলসেচ করতে হবে।

চারা বা কন্দ লাগানোর ৪-৫ সপ্তাহ পর নাইট্রোজেন সারের বাকী অর্ধেক চাপান সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে।

উন্নতজাতঃ আকার অনুযায়ী তিনটি শ্রেণী যথা (১) বড় আকারের ঝাঁঝ কম ২”-৪” ব্যাসযুক্ত। (২) ২ এর কম ব্যাসযুক্ত ঝাঁঝযুক্ত এবং (৩) ছোট আকারের ছাঁচি পেঁয়াজ বেশি ঝাঁঝযুক্ত।

বড় আকারের পেঁয়াজ লাল সাদা ও হলদে রঙের হয় যথা পুসা রাটনার (গোল গাঢ় লাল) ইয়েলো গ্লোব (বড় গোল হলদে রঙের) আর্লি গ্রেনো (আমেরিকা থেকে আমদানিকরা বড়, হলুদ রঙের, ঝাঁঝ কম) পাটনাই রেড, পাটনাই হোয়াইট।

মাঝারি আকারের- পুসা রেড, নাসিক রেড, রেড গ্লোব, লাল পাটনাই প্রভৃতি। এগুলি সবই লাল রঙের।

সাদা জাতের পেঁয়াজ- সাদা পাটনাই, সিলভার স্কীন, হোয়াইট গ্লোব প্রভৃতি। ছাঁচি পেয়াজ বা ছোট আকারের পেঁয়াজ সাধারণত গুচ্ছাকারে ধরে এবং লাল রঙের

হয়।

ফসল তোলাঃ লাগানোর ৩-৪ মাস পর পেঁয়াজ তোলার উপযুক্ত হয়। পেঁয়াজের পাতা হলদেটে হয়ে গেলে এবং ডগা শুকাতে আরম্ভ করলে বুঝতে হবে পেঁয়াজ তোলার উপযুক্ত হয়েছে। শুকনো গাছ টানলেই পেঁয়াজ উঠে আসবে। পেঁয়াজ তোলার পর ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। রোদে শুকালে বেশিদিন রাখা যাবে না।

ফলন: একর প্রতি গড় ফলন ১০০-১২০ কুইন্টাল।

রোগ পোকার আক্রমন ও প্রতিকারঃ পেঁয়াজের জমিতে অনেক সময় ধসা রোগের (অলটারনারিয়া পলান্ডু) (Alternaria palandui) অক্রমন হয়। পাতায় ছোট ছোট দাগ দেখা যায় ওই দাগের ম ঝে বেগুনী রঙের ফুটকি থাকে।

প্রতিকারঃ ১লিটার জলে ২১/ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ বা ডাইথেন জেড-৭৮ গুলে পাতায় ও ডাঁটাই ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। পেঁয়াজের জমিতে বেশ কিছু পোকা দেখা যায় যেমন (১) চুষি পোকা (Onion Thrips) (২) জাব (Aphid) পোকা (৩) মাছির কীড়া (Onion maggot) ৪) লাল মাকড় (Red mite) প্রভৃতি। প্রতিকার: ১০লিটার জলে ৪ মিলি ম্যালাথিয়ন গুলে স্প্রে করতে হবে।

এই খবরটা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করুন, যার এটা জানা দরকার

Make your comment