মোদীকে ১৮ পাতার চিঠি লিখে আত্মঘাতী কিশোরী

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now
Instagram Channel Follow Now

মোদীকে ১৮ পাতার চিঠি লিখে আত্মঘাতী কিশোরী

উত্তরপ্রদেশ: একটা ভয়ের জগতে বাস করছিল মেয়েটি। তবে, ভয়টা ঠিক নিজেকে নিয়ে নয়। দেশ-দুনিয়ার ভবিষ্যত্‍‌ ভেবেই অস্থির হয়ে পড়েছিল ওই মেয়েটি। রোজ বাড়তে থাকা দূষণ-দুর্নীতির দুশ্চিন্তা কালো মেঘের মতো জমেছিল তার মনে।

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMJ-knQswsK61Aw?hl=en-IN&gl=IN&ceid=IN:en

তবে, মেয়ে বেঁচে থাকতে তাঁর মনের দীর্ঘ পুঞ্জিভূত মেঘের খোঁজ পায়নি তার মা-বাবা পায়নি। সে যে নিজের জগতে বিচরণ করত। কথা বলত কম। ভাবত বেশি। ভাবনার অতিভারই তাকে করে রেখেছিল বিষাদগ্রস্ত।

হতাশায় যা হয় আর কি! নিজের মনের কাছে পরাস্ত হয়ে, হাতে তুলে নেয় বাবার লাইসেন্সড রিভলভারটি। স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে একলাঘরে সেই লোডেড রিভলভার তাক করে নিজের মাথায়।

ট্রিগারে চাপ দিতেই লুটিয়ে পড়ে পড়ার টেবিলে। মুহূর্তে সব শেষ! রক্তে ভেসে যায় ঘরদুয়ার। গুলির শব্দে পাশের ঘর থেকে ছুটে আসে মা-বাবা। তখন মেয়ে নিথর। রক্তমাখা। নিজের সব দুশ্চিন্তা লাঘব করে, প্রাণহীন পড়ে। একটা মাত্র বুলেটে মনের সব অস্থিরতা, উথালপাথাল উধাও।

পড়ার টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পায় পরিবার। আর পাঁচটা সুইসাইড নোটের মতো নয়। দীর্ঘ আঠারো পাতার একটি চিঠি। এতদিন সে যা ভেবে এসেছে, যা তাকে কখনও সুস্থির হতে দেয়নি, সে-সবই লিখেছে পাতায় পাতায়। চিঠিটি লেখা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সম্বোধন করে। চিঠির ছত্রে-ছত্রে দূষণ নিয়ে উদ্বেগ। চারপাশে দুর্নীতি নিয়ে হতাশা। বাড়তে থাকা জনবিস্ফোরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা।

মাত্র ষোলোর মেয়ের মনে এতকিছু যে ঘুরপাক খেত মা-বাবা তার আঁচ কিশোরীর মৃত্যুর আগে পাননি। আত্মঘাতী এই কিশোরীর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে। যে উত্তরপ্রদেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-খুন-অপহরণ বাড়ছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্নে বিব্রত বোধ করছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

পুলিশ জানায়, স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের আগের রাতে উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের বাড়িতে বসে চরম সিদ্ধান্ত নেয় ওই ষোলোর মেয়েটি। ববরালার এক বেসরকারি স্কুলের ছাত্রী আত্মহত্যার আগে মোদীর উদ্দেশে আঠারো পাতার একটি চিঠি লিখে গিয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করে। ওই চিঠিটিই পুলিশের কাছে সুইসাইড নোট।

মোদীর সঙ্গে সামনা-সামনি সাক্ষাত্‍‌ করতে সে যে ব্যাকুল ছিল, চিঠিতে সে উল্লেখ করেছে। প্রাথমিক তদন্তের পর বুধবার পুলিশ জানায়, ওই কিশোরী দুর্নীতি, দূষণ, বনজঙ্গল কেটে সাফ করার মতো একাধিক ঘটনায় অস্থির ছিল। সুইসাইড নোটে সে লেখে, তার খুব ইচ্ছে ছিল এই সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বসে একদিন মুখোমুখি আলোচনা করবে।

১৮ পাতার নোটে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তার আর্জি রয়েছে, বাড়তে থাকা জনসংখ্যার রেখচিত্র নিম্নমুখী করতে পদক্ষেপ করুন। দিওয়ালির সময় আতসবাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার অনুরোধও রয়েছে। হোলিতে যে রাসায়নিক রঙের ব্যবহার হয়, তা যাতে বন্ধ করা যায়, সে আর্জিও রয়েছে ওই কিশোরীর তরফে।

এছাড়া, চিঠিতে সে আরও জানিয়েছে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বয়স্ক মানুষেরা যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তাতে সে খুবই ব্যথিত। সে লিখেছে, ‘সন্তানরা তাদের বাবা-মাকে যেখানে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় এমন পৃথিবীতে আমি আর বাঁচতে চাই না।’ সে লিখেছে, ‘সন্তানরা তাদের বাবা-মাকে যেখানে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় এমন পৃথিবীতে আমি আর বাঁচতে চাই না।’

স্টেশন হাউস অফিসার দেবেন্দ্র কুমার জানান, ১৪ অগস্ট রাতে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। এই চরম পদক্ষেপ করার আগে দীর্ঘ আঠারো পাতার একটি চিঠি লিখেছে। কিশোরীর মা জানান, মেয়ের মানসিক অসুখের চিকিত্‍‌সা চলছিল। তার মধ্যেই এই অঘটন! তিনি চান, মেয়ের শেষ ইচ্ছা যেন পূরণ হয় সেই আবেদনই জানাবেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

Author

এই খবরটা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করুন, যার এটা জানা দরকার

Make your comment