মুম্বই: অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু শেখাচ্ছে অনেক কিছু। নায়কের এই পরিণতি ৩ মাসের মধ্যে জায়গা করে নিল পড়াশোনার ক্ষেত্রেও। তাঁর মৃত্যুর কারণ, মানসিকতার পরিবর্তন, নেশাচক্রের অভিযোগ – এসবের কারণেই এই কেস জায়গা পেয়েছে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা ম্যাকাউটের পাঠ্যক্রমে।
ফরেন্সিক সায়েন্সের স্নাতক-স্নাতকোত্তরের পড়াশোনায় কেস স্টাডিজ হিসেবে থাকছে সুশান্তের মৃত্যু কাহিনী। অবশ্য এর আগে অপরাধ জগৎ আর ফরেন্সিক বিজ্ঞানের পড়াশোনার জন্য জায়গা করে নিয়েছে শ্রীদেবীর মৃত্যু, আম্বিয়া-সাম্বিয়ার ‘হিট অ্যান্ড রান কেস’, জামতাড়া বা রোমানিয় গ্যাংয়ের অনলাইন প্রতারণার কেসগুলিও।
গত বছর প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে যাত্রা শুরু করে ম্যাকাউটের ফরেন্সিক সায়েন্স বিভাগ। স্নাতকে এই বার ভালো সাড়া মেলায় প্রায় ৫০টি আসন বেড়েছে। গতবার ৩০টি আসনে ভর্তি হয়েছিলেন মাত্র ১৮ জন। সেখান থেকে সংখ্যা বাড়িয়ে এই বার ৮০ করা হয়েছে। প্রায় ২৫০ জন এই বিষয় নিয়ে পড়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইতিমধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৭৫ জন, ভর্তি এখনও চলছে। স্নাতকোত্তরেও বেড়েছে আসন।
বিভাগীয় অধ্যাপক সুজয় মিত্র জানান, রাজ্যে এই ধরনের কোর্স আর কোথাও নেই। সারা দেশেই হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যেমন ওসমানিয়া, মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোর্স পড়ার সুযোগ রয়েছে। আধুনিক সময়ের অপরাধ সেই ‘শোলে’র আমলের চুরি-ডাকাতিতে সীমাবদ্ধ নয়। অপরাধের ধরন এবং বিস্তার দুই-ই বেড়েছে। পড়ুয়াদের ‘আপ টু ডেট’ রাখতে তাই সাম্প্রতিক সাড়া জাগানো কেসগুলিকে কোর্সে রাখা হয়েছে।
এই কোর্সে ‘ক্রাইম সিন’ নামে একটি অধ্যায় আছে। সেখানে সুশান্তের ঘটনাটি আনা হচ্ছে দু’ভাবে। সুজয়ের বক্তব্য, ‘প্রথমত ঘটনাস্থলের পুনর্নির্মাণ। দ্বিতীয়ত ফরেন্সিক সায়েন্সে সাইকোলজির একটা বড় ভূমিকা থাকে, ফলে নায়কের মানসিকতার বিষয়টিকেও আনা হচ্ছে।’ শ্রীদেবীর ঘটনায় আবার তিনি কীভাবে বাথটাবে ডুবে গেলেন, এর নেপথ্যে তাঁর ডিপ্রেশনের ভূমিকা কতটা ছিল, কোনও অন্তর্ঘাত থাকলে কী করে বোঝা যাবে, এই সব পড়ানো হবে। থাকছে মাদকচক্রের প্রসঙ্গও। তবে বিভাগের বক্তব্য, নিজেদের মন্তব্য বা দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া নয়, পড়ুয়ারা এমন কেস পেলে কী ভাবে বিশ্লেষণ করবেন, সেটাই খতিয়ে দেখা হবে।
ফরেন্সিক মেডিসিনের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় গুপ্তর বক্তব্য, ‘অপরাধের বহর প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে। তাল মেলাতে প্রয়োজন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞও। কেবল পুলিশ বা গোয়েন্দা বিভাগেই নয়, এখন নানা মাধ্যমে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের চাহিদা বাড়ছে।’
বিএসসি করতে হলে দ্বাদশে থাকতে হবে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, বায়োলজি, গণিত, কম্পিউটার সায়েন্সের মতো বিষয়। বিজ্ঞান শাখার যে কোনও বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট, এমবিবিএস, এমডিএস, বিসিএ পড়া থাকলে স্নাতকোত্তর করা যাবে। পড়ানো হবে ডিজিট্যাল ফরেন্সিক, সাইবার ক্রাইম, ড্রাগস, টক্সিকোলজি, ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন, ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো আরও কিছু বিষয়।