ইন্টারনেট নেই, তাই বলে থেমে নেই ক্লাস, কলেজ পড়ুয়ারাই শিশুদের শেখাচ্ছে জীবনের পাঠ
পালঘর: ঠিক যেন নিকুম্ভ স্যারের ক্লাস। মজার ক্লাস। সেখানে পড়াশোনা হয়, গানবাজনাও হয়, ছবি আঁকাও শেখানো হয়। কোনও বকাবকি নেই, নম্বর তোলার হিড়িক নেই। ঠিক তেমনই ক্লাস হচ্ছে মহারাষ্ট্রের গ্রামে।
গল্প নয় সত্যিই। পালঘর জেলার তরলপাড়া আদিবাসী গ্রামের বাচ্চাদের এভাবেই পড়াচ্ছেন কলেজ পড়ুয়ারা। গরিব শিশুরা মোবাইল ফোনের টেকনোলজি বোঝে না। অনলাইন ক্লাস অনেক দূরের কথা। দু’বেলা পেট ভরাতেই হিমশিম খেতে হয় বাবা-মায়েদের।
ছোটখাটো একটা স্কুল এতদিন চলছিল আদিবাসী গ্রামে। মিড-ডে মিলের টানে ছুটে যেত বাচ্চারা। কিন্তু লকডাউনে সে স্কুলে তালা পড়েছে। কাজেই পড়াশোনা একেবারে বন্ধ। এই অবস্থায় বাচ্চাদের পাশে দাঁড়িয়েছে একদল কলেজ পড়ুয়া।
লকডাউনের গত কয়েক মাসে লিখতে পড়তে একেবারেই ভুলে গেছে বাচ্চারা, জানিয়েছেন পরশুরাম ভোরে। কলেজে পড়েন। লকডাউনে কলেজও বন্ধ। তাই নিজের পড়াশোনার বাইরে বাচ্চাদেরও পড়াচ্ছেন নিয়ম করে।
বললেন, “স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে দেখতাম বাচ্চারা গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় খেলে বেড়াচ্ছে। গ্রামের স্কুলে অনলাইন ক্লাসের বালাই নেই। তাই যতদিন না স্কুল খুলবে এভাবেই খেলে বেড়াবে বাচ্চারা। অনেকেই লিখতে পড়তে ভুলে গেছে। এমন অবস্থায় তাদের হাত না ধরলে পড়াশোনা ছেড়ে শেষে দিনমজুরি শুরু করে দেবে।”
পরশুরাম বলেছেন, গ্রামের কলেজ পড়ুয়ারা মিলে একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। বয়স ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। প্রত্যেকেরই কলেজ বন্ধ। তাই সকলে মিলে ঠিক হয়েছে বাচ্চাদের ক্লাস নেওয়া হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ক্লাস। ৬ বছর থেকে ১৫ বছর অবধি ছেলেমেয়েদের পড়ানো হয় এখানে। মারাঠি, ইংরাজি ভাষা শেখে বাচ্চারা। অঙ্ক, বিজ্ঞান সবই পড়ানো হয়।
তবে শুধু পড়াশোনা নয়। পরশুরাম বলছেন, বাচ্চাদের আগ্রহ তৈরি করতে পড়াশোনার পাশাপাশি গান, ছবি আঁকা শেখানো হয়। গিটার বাজিয়ে শোনান কলেজ পড়ুয়ারা। হইহই করে ক্লাস হয় এখানে।
এখানে কেউ বকে না বাচ্চাদের, নম্বরের প্রতিযোগিতা নেই। আনন্দ করে পড়াশোনা শেখানো হয়। তাই বাচ্চাদেরও ক্লাসে আসার টান তৈরি হয়েছে। নিয়ম করে সকলে হাজির হয়ে যায় সকালে। একজনও ক্লাস কামাই করে না।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য সীতা ঘাটাল বলেছেন, গ্রামের কমবয়সী কলেজ পড়ুয়ারা যত্নের সঙ্গে পড়াচ্ছে গরিব বাচ্চাদের। যেহেতু বয়সের ফারাক কম, তাই কলেজ পড়ুয়াদের কাছে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বাচ্চারা। শুধু পড়ানোই নয়, এই ছেলেমেয়েরা হয়ে উঠেছে গরিব শিশুদের খেলার সঙ্গীও।
সঙ্গে তাদের সুখ-দুঃখও ভাগ করে নিচ্ছে আপনজনের মতো। ইন্টারনেট নেই তো কি হয়েছে? ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে জীবনের বড় পাঠ দিচ্ছে ওই কলেজে পড়ুয়ারা।