কালের নিয়মে জমিদারের দুর্গাপুজো আজ সার্বজনীন, তবে নিয়মপালনে নেই কোন ত্রুটি
মালদা: মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের মিশ্র জমিদার পরিবারের সদস্য হরিমোহন মিশ্রকে নিয়ে একসময় পূর্ণিয়া মেডিকেল কলেজের চিকিৎসারত বনফুল অর্থাৎ বলাইচাঁদ মুখার্জি রচনা করেছিলেন কালজয়ী উপন্যাস দ্বৈরথ। সেখানে তিনি জমিদার হরিমোহন মিশ্রর উপন্যাসে নাম দেওয়া হয়েছিল উগ্র মোহন সিং।
আর সেই হরিমোহন মিশ্রের জমিদারির মধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ভালুকা বাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা পুজো আজ সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। একসময় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মিশ্র জমিদারদের জমিদারি বিস্তৃত ছিল ভালুকা সহ বিহারের আজিমগঞ্জ, বারসই, মনিহারি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। মিশ্র জমিদারির বর্তমান সদস্য জানালেন হরিমোহন মিশ্র জমিদারের সঙ্গে ছিলেন ধর্মপ্রিয়।
সে সময় তাদের জমিদারীর মধ্যে ভালুকা ছিল প্রধান অংশ অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর ছিল সদর। প্রায় ১২৭ বছর আগে তখন এলাকায় ইংরেজ শাসন। সে সময় তাঁর জমিদারির ভালুকার ফুলহর নদীর তীরে প্রায় 200 বিঘা জমির উপর তৈরি করেছিলেন দুর্গা মন্দির। সাতদিন ধরে চলত দুর্গা পূজাকে ঘিরে উৎসব অনুষ্ঠান। আমন্ত্রিত হতেন ইংরেজরাও। চলতো গান বাজনা।
কলকাতা থেকে আনা হতো যাত্রা পার্টি। হাতির পিঠে করে জমিদার বাড়ির সদস্যরা যেতেন পুজো দিতে। চলতো নরনারায়ন সেবা ও বস্ত্র বিতরণ। আমন্ত্রিত হতো সারা জমিদার এর প্রজারা । ১৯৬৪ সালের ফুলহরের ভাঙ্গনে তলিয়ে যায় জমিদার হরিমোহন মিশ্রের তৈরি করা এই সুবিশাল দুর্গা মন্দির।
তারপরেই ভালুকা বাজারে এই পুজো স্থানান্তরিত হয়ে যায়। আজও এই পুজো সার্বজনীন হয়ে গেল সাবেকি প্রতিমা এখনো বজায় রয়েছে। এই বাড়িরই সন্তান রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী সৌরীন্দ্র মোহন মিশ্র।
বর্তমানে এই পূজাটি এখন ভালুকা বাজারের বাসিন্দারাই আয়োজন করে থাকে। ১৯৫৩ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে এলাকার বাসিন্দারা উদ্যোগে এই পুজো করে আসছে।
বর্তমান পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন উত্তম সিংহ জানান এলাকার জমিদাররা প্রতিষ্ঠা করলেও কালের নিয়মে এই পুজো এখন এলাকায় সার্বজনীন হয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীরা চাঁদা তুলে এই পুজোর আয়োজন করে থাকে। এবার 127 তম পুজো। পুজোর চারদিনের ধুমধাম করে নিষ্ঠা সহকারে সাবেকি প্রতিমার পুজো করা হয়। সারা ভালুকা বাজার এলাকার লোকজন এই পুজোয় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া অষ্টমীর দিন এলাকার সমস্ত মহিলা এক হয়ে মায়ের পূজা দেন। আগে যাত্রাপালা হলেও এখন আর অর্থের অভাবে যাত্রাপালা করা সম্ভব হয় না। জনসেবা ও বস্ত্র বিতরণ হয়ে থাকে।
আরেক উদ্যোক্তা দেবাশীষ পাসওয়ান জানান সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে আজ এই পুজো হয়ে থাকে। সেই সময় এলাকার দাপুটে জমিদার হরিমোহন মিশ্র এলাকাবাসীদের অনুরোধে এখানে দুর্গা পুজো আরম্ভ করেছিলেন। আজও নবমীর দিন এখানে কুমড়ো বলি হয়।
তার সঙ্গে সঙ্গে হয় ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভালুকার রায় মোহন মোহিনী মোহন হাই স্কুল এই জমিদারদের প্রতিষ্ঠা করা। ভালুকার মিশ্র জমিদাররা দাপুটে হলেও এলাকায় শিক্ষা সংস্কৃতিতে কোনরকম খামতি রাখতেন না।
কালের নিয়মে বনফুলের দ্বৈরথ উপন্যাসের ট্রাজিক হিরো জমিদার হরিমোহন মিশ্রর প্রতিষ্ঠা করা দূর্গা পূজা আজ জমিদারদের প্রভাবমুক্ত হয়ে সার্বজনীন হয়ে গেলেও এলাকার মানুষের কৃতজ্ঞতা আজও
রয়ে গেছে উপন্যাসের উগ্র মোহন সিং এর প্রতি।

মাত্র ১২ হাজারে ৮ জিবি RAM এর মোবাইল- এখনই কিনুন